থানা বিএনপি’র সম্মেলনের পর এবার ওয়ার্ড পর্যায়েও কমিটি গঠনের পূর্বেই নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলে। ওয়ার্ড বিএনপি’র সম্মেলনে কৌশলে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মহানগর বিএনপি’র শীর্ষ একজন নেতার সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ শুক্রবার নগরীর ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়; তার একদিন আগেই বৃহস্পতিবার ঠুনকো অযুহাতে ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি প্রার্থী আতিকুর রহমান রুবেল বিশ্বাসকে যুগ্ম-আহবায়ক পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। গতকাল সম্মেলনের পূর্বেই একক প্রার্থী ব্যতীত অন্য প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা লিখিত অভিযোগ করে অনুষ্ঠান বয়কটের ঘোষণা দেয়। শুধু ১৬নং ওয়ার্ডে নয়, ২২ ও ১৯নং ওয়ার্ডসহ প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই পছন্দের প্রার্থীকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করতে নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। আর এসব যথেচ্ছার প্রতিবাদ করায় নগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কত নেতা-কর্মীকে অব্যহতি/বহিস্কার করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যনও নেই দপ্তরে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ অক্টোবর বায়তুন নূর শপিং সেন্টারের দোকান ঘর নিয়ে মহানগর বিএনপি’র মনিটরিং সেলে ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়ক আতিকুর রহমান রুবেল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন মোঃ নাসির নামের একজন দোকান মালিক। একদিন পর অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেন অভিযোগকারী। কিন্তু রুবেল বিশ্বাসকে ঘিরে ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যায়নি। ১৮ অক্টোবর মোঃ ফোরকান গাজী নামের আরেকজন দোকান মালিককে দিয়ে মার্কেটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ করানো হয়। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই গত ২৪ অক্টোবর আতিকুর রহমান রুবেল বিশ্বাসকে ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়কের পদ থেকে অব্যহতি দেয় নগর বিএনপি। গতকাল ওয়ার্ডটিতে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অবশ্যই তার পূর্বেই মহানগর বিএনপি’র নির্বাচন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে সম্মেলন ও নির্বাচন বর্জন করেন প্রতিটি পদে একক প্রার্থী ব্যতীত সকলেই। শুধু তাই নয়, তারিখ নির্ধারণের পর থেকে সম্মেলন পর্যন্ত একজন প্রার্থীকে বহিষ্কার ও দুইজনকে অব্যহতি প্রদান করা হয়েছে শুধু ১৬নং ওয়ার্ডে। এছাড়া কয়েকজন লিখিত অভিযোগ দিয়ে সম্মেলন বর্জন করেছেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর ১৬নং ওয়ার্ডের সম্মেলনের দিনধার্য ছিল। অনিবার্য কারণ দেখিয়ে সম্মেলন স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে ২৫ অক্টোবর সম্মেলন ও নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়। এরপর একটি পক্ষের বিজয় সুনিশ্চিত করতে, অপর পক্ষকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন, কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে একেরপর এক বহিস্কার ও পদ থেকে অব্যহতি দেয়া শুরু করেন। নগর বিএনপি’র একজন শীর্ষ নেতা ডেকে নিয়ে সরাসরি তার পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দিতে নির্দেশ দেন। এছাড়া ইচ্ছা মতোই দু’জন নতুন ভোটার অর্ন্তভুক্ত করা হয়। সম্মেলনের পূর্বরাতেই একজন সভাপতি প্রার্থী আতিকুর রহমান রুবেল বিশ্বাসকে অব্যহতি দেয়া হয়। ফলে সম্মেলন ও নির্বাচন সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য না হবার শঙ্কা প্রকাশ করে বর্জনের ঘোষণা করেন অভিযোগকারীরা।
বিএনপি নেতা আতিকুর রহমান রুবেল বিশ্বাস বলেন, একজন ব্যবসায়ীর মিথ্যা অভিযোগে আমাকে অব্যহতি দেয়া হল। অথচ অর্ধশত ব্যবসায়ী প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে নগর বিএনপি’র মনিটরিং সেলে লিখিত দিলেন; তাদের সুপারিশ আমলেই নেয়া হল না। এ বিষয়ে আর কোন মন্তব্য করতে চাই না।
ওয়ার্ড বিএনপি’র প্রবীন নেতা আতাউর রহমান সার্ভেয়ার বলেন, পছন্দের প্রার্থীকে সভাপতি/সম্পাদক বানাতে যা যা করা দরকার তাই তাই করা হয়েছে। এখানে বলার কিছুই নেই।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে ২২ ও ১৯নং ওয়ার্ডের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, প্রতিটি ওয়ার্ডেই যেকোনো কৌশলে পছন্দের প্রার্থীকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করানো হয়েছে। গণতান্ত্রিক পন্থায় নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা বললেও বাস্তবে তা অনুসরণ করা হয়নি। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় অসংখ্য নেতা-কর্মীকে বহিস্কার ও অব্যহতি দেয়া হয়েছে। দলের দুর্দিনে জীবনবাজী রেখে আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া নেতা-কর্মীদের নামে ডজন-ডজন মামলা; এ অবস্থায় ঠুনকো অজুহাতে তাদের বহিস্কার/অব্যহতি সত্যিই অত্যন্ত কষ্টকর বলে মন্তব্য তৃণমূল নেতা-কর্মীদের।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপি’র তিন সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। ২০২২ সালের ১ মার্চ এড. শফিকুল আলম মনাকে আহবায়ক, মোঃ শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব রেখেই মহানগর বিএনপি’র ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতেও বাদ রাখা হয় দলের একটি বিরাট অংশের নেতৃত্বকে।